বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক:- তামিলনাড়ুর কুন্নুরে চপার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল সস্ত্রীক সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াতের। মৃত্যু হয়েছে সেনা কপ্টারে সওয়ার আরও ১২ জনেরও। দেশের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়কের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। নীলগিরির দুর্ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় বিপিন রাওয়াতকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর শরীরে ৮৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। ভরতি করা হয় ওয়েলিংটন সেনা হাসপাতালে। সেনা সর্বাধিনায়কের চিকিৎসার জন্য ৬ সদস্যের মেডিক্যাল টিমও তৈরি হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। প্রয়াত হলেন সস্ত্রীক বিপিন রাওয়াত।
ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়েছে, কপ্টারে থাকা ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। সন্ধে ৬টা নাগাদ ভারতীয় সেনার তরফে সেনা সর্বাধিনায়কের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। জানানো হয়, তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াতেরও মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের শরীরের ৮৫ শতাংশই পুড়ে গিয়েছে। ফলে মৃতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হতে পারে বলে খবর। এদিকে এখনও মৃত্যুর সঙ্গে এখনও পাঞ্জা লড়ছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং। গুরুতর আহত তিনি।
প্রসঙ্গত, বুধবার সুলুরের সেনা ছাউনি থেকে এমআই সিরিজের চপারটি ওয়েলিংটনের সেনাঘাঁটির দিকে যাচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায় কপ্টারে। আর এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রয়াত হলেন দেশের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াত।
১৬ মার্চ ১৯৫৮, উত্তরাখণ্ডের পাউরিতে যোদ্ধা পরিবারে জন্ম হয় বিপিন রাওয়াতের। দেরাদুন ও শিমলায় স্কুলশিক্ষা শেষে যোগ দিয়েছিলেন ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে। ১৯৭৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর গোর্খা রেজিমেন্ট থেকে সেনায় শুরু হয় তাঁর কেরিয়ার। তারপর সময়ের সঙ্গে কাশ্মীর-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ফৌজি ইউনিটের দায়িত্ব সামলেছেন। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রসংঘের হয়ে কঙ্গোতে শান্তিরক্ষা অভিযানেও অংশ নেন তিনি।
সাহসিকতা ও কর্তব্যে অবিচল থাকার জন্য তাঁর ইউনিফর্মে যুক্ত হয়েছে পরম বিশিষ্ট সেবা মেডেল, বিশিষ্ট সেবা মেডেল, সেনা মেডেল, অতি বিশিষ্ট সেবা মেডেল, যুদ্ধ সেবা মেডেল এবং উত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল। ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ সালে ভারতীয় সেনাপ্রধান পদে বসেন কাউন্টার ইনসার্জেন্সি বিশেষজ্ঞ রাওয়াত। ২০১৯ সালে অবসরের পর দেশের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক পদে নিয়োগ করা হয় তাঁকে। তবে তাঁর মুকুটের সেরা পালক হচ্ছে ২০১৫ সালে মায়ানমারে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। তাঁর নেতৃত্বেই মায়ানমারে ঢুকে নাগা জঙ্গিগোষ্ঠী এনএসসিএন (খাপলাং)-এর শিবিরে হামলা চালায় ভারতের বিশেষ কমান্ডো বাহিনী।
নিজের কর্মদক্ষতা ও উত্তর-পূর্ব ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ সম্পর্কে রাওয়াতের জ্ঞানের পরিধি ছিল অসীম। নাগাল্যান্ডের ছোট্ট পাহাড়ঘেরা শহর ডিমাপুরে সেনার থার্ড কোরের দায়িত্ব ছিল রাওয়াতেরই কাঁধে। সেনার বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ২১ প্যারা স্পেশ্যাল ফোর্স-এর রাশ ছিল তাঁর হাতে। সেই কারণে মণিপুরে জঙ্গি হামলার পর নাগা জঙ্গিদের পালটা মার দিতে রাওয়াতের উপরই ভরসা রাখেন তৎকালীন সেনাপ্রধান দলবীর সিং সুহাগ। দিল্লির সবুজ সংকেত মিলতেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রস্তুতি শুরু হয় রাওয়াতের।
৯ জুন, ২০১৫ সালে মণিপুরের উখরুল হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে মায়ানমারের শত্রু এলাকায় প্রবেশ করে ৭০ জনের ভারতীয় কমান্ডো বাহিনী। সেদিন ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এনএসসিএন-এর শিবিরে হামলা শুরু করে কমান্ডো বাহিনী। শহিদ জওয়ানদের বদলা নিয়ে ওই হানায় খতম করা হয় কমপক্ষে ৩৮ জন জঙ্গিকে। খাপলাং গোষ্ঠী বুঝতে পারে এবার সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালাতে পিছপা হবে না ভারতীয় বাহিনী। সেই হামলার পরই শিরোনামে উঠে আসে সাহসিকতার জন্য একের পর এক পদকজয়ী বিপিন রাওয়াতের নাম। এহেন সাহসী যোদ্ধা ও সেনানায়কের অকাল প্রস্থানে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।