বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-
ঘরোয়া রূপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার সুপ্রাচীন কাল থেকেই সুবিদিত। মিশরের ক্লিওপেট্রা থেকে শুরু করে আমাদের সাধারণ বাড়ির মা কাকিমারাও আমাদের ছোট থেকেই ত্বক ভালো রাখতে, জেল্লা বাড়াতে গোলাপ জলের ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এমনকি নানা প্রসাধনি তৈরিতেও গোলাপ জলের ব্যবহার অনস্বীকার্য। তবে আজ আমি আপনাদের বলব, শুধু ত্বক নয় চুলের পরিচর্যাতেও গোলাপজলের অনেক গুনাগুন রয়েছে। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন চুলের চর্চাতেও গোলাপ জলের জুড়ি মেলা ভার। তবে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে, সেই নিয়ম অনুসরণ করে গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারলে চুল হয়ে উঠবে একদম সিনেমার নায়িকাদের মতন রেশমি নরম, সুন্দর ও প্রাণোচ্ছ্বল।
একথা অনেকেই জানে যে, ত্বকের পি এইচ ভারসাম্যকে রক্ষা করে গোলাপজল। তাই রোজ ওয়াটার টোনার রূপচর্চার একটি বিশেষ অঙ্গ। কিন্তু এই একই কাজ গোলাপজল চুলের ক্ষেত্রেও করে থাকে। আমাদের মাথার স্ক্যাল্পের পি এইচের ভারসাম্যকে ধরে রাখে গোলাপজল, চুলকে মজবুত করে তোলে, তার সাথে নির্জীব নিষ্প্রাণ চুলে আনে সজীবতার ছোঁয়া। ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে’র একটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে, গোলাপের পাপড়ির নির্যাসে থাকে প্রদাহ বিরোধী উপাদান যা আমাদের স্ক্যাল্পের চুলকানি বা অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে, জ্বালা ভাব কমায়, খুশকির সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করে, স্ক্যাল্পের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাবকেও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
বাড়িতে খুব সহজেই রোজ ওয়াটার হেয়ার স্প্রে বানিয়ে স্প্রে বোতলে করে রেখে দেওয়া যায়। কোঁকড়ানো চুল অথবা ফ্রিজি চুল হলে প্রতিদিন এই রোজ ওয়াটার হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে। প্রত্যহ বাইরে বেরোনোর সময় ব্যাগে করে এই ছোট্ট স্প্রে বোতলটি রেখে দেওয়া যায়। সারাদিন বাইরে থাকার সময় চুল ফ্রিজি হয়ে গেলে চুলে রোজ ওয়াটার স্প্রে করে নিন। ফ্রিজিভাব কেটে যাবে, উপকারও পাবেন।
এক্ষেত্রে বলা যায় বাজার চলতি গোলাপজল ব্যবহার করাই যায়, তবে বাড়িতে তৈরি করা গোলাপ জলের কিন্তু কোনো তুলনা হয় না। তবে বাজার চলতি গোলাপজল ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখবেন সেটি যেন সালফার, প্যারাবেন, এবং টক্সিন মুক্ত হয়। আর বাড়িতে তৈরি গোলাপজল একমাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো শীতল এবং শুকনো স্থানে রাখলে ঘরে তৈরি গোলাপজল অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
উল্লেখ্য, স্ক্যাল্প বা চুলের কোনো চিকিৎসা চললে গোলাপজল ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বিশেষভাবে জরুরী। গোলাপজলের ব্যবহার বিধি প্রসঙ্গে বলা যায়, গোলাপজল বিবিধভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো হেয়ার প্যাকে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগানো যেতে পারে, গোলাপজল এমনিও স্ক্যাল্পে স্প্রের মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গোলাপজল তৈরি করতে প্রধানতঃ তিনটি উপাদান লাগে। অর্গানিক গোলাপ, স্প্রে বোতল, ডিস্টিলড ওয়াটার। তৈরীর প্রক্রিয়াটিও বেশ সহজ। প্রথমে গোলাপের সব পাপড়িগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে খুব হালকা হাত সওয়া গরম জলে ধুয়ে ফেলতে হবে, যাতে পাপড়িতে লেগে থাকা কোনোরকম কৃত্রিম রং ধুয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর পাপড়িগুলো ডিস্টিলড ওয়াটারে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে ২৫ মিনিট হালকা আঁচে গরম করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না জলটির রং বদল হয়ে হালকা গোলাপি বর্ণ ধারণ করে ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর জল ছেঁকে পাপড়িগুলো আলাদা করে নিয়ে ফেলে দিতে হবে। আর জলটিকে একটি কাচের বোতলে সংরক্ষিত করে ফ্রিজে রেখে দিন। প্রয়োজনমতো স্প্রে বোতলে ভরে ব্যবহার করুন।