Categories
ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান

জগন্নাথ- বলরাম- সুভদ্রা রথে করে মিউজিয়ামে যেতে চান দাবি এলাকাবাসীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর :-

চুয়াড় বিদ্রোহ বললেই উঠে আসে রানি শিরোমণি, কর্ণগড়ের নাম। ‘মেদিনীপুর’ পরগণার রানি ছিলেন শিরোমণি। রাজা অজিত সিংহের দ্বিতীয় স্ত্রী তিনি। পুত্রবধূ রাজা যশোবন্ত সিংহের। রাজপরিবারের মন্দির বললেই উঠে আসে দেবী মহামায়ার নাম। তবে ওড়িশা যোগ থাকায় রাজপরিবারে এক সময় মূল মন্দির ছিল জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার। সেই বিগ্রহ আজও আছে তবে  ‘ক্ষয়প্রাপ্ত’ অবস্থায়। হয় না রথযাত্রাও ।

রানি শিরোমণি গড়ের সামনেই ছিল সেই জগন্নাথ মন্দির। উদাসীনতায় তা ভাঙতে ভাঙতে ‘লোপ’ পেয়েছে। টিকে আছে সামান্য জরাজীর্ণ স্তম্ভ। লতাপাতায় ঢেকে আছে এমন ভাবে, যা সহজে খালি চোখে দেখা যায় না।

প্রাচীন বিগ্রহ আছে কর্ণগড়ের ‘পণ্ডা’ পরিবারে। রাজপরিবারের মন্দিরে নিযুক্ত হওয়ার আগে পুরোহিতের আসল পদবী ছিল ‘চক্রবর্তী’। পরে তিনি উপাধি পান ‘পণ্ডা’। সেই উপাধিই এখন বংশপরম্পরায় পদবী।

উল্লেখ্য, মন্দিরে প্রাচীন এই বিগ্রহের পুজো করতেন অন্নদাচরণ পণ্ডা। আগে গড়ের সামনেই ছিল তাঁদের বাড়ি। পরবর্তীকালে ডাকাতের ভয়ে পুরোহিতের পরিবার চলে আসেন মহাময়া মন্দিরের কাছে। এখন সেখানেই বাসস্থান পুরোহিতের বংশধরদের।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জরাজীর্ণ মন্দির থেকে বাড়িতে বিগ্রহ নিয়ে এসেছিলেন গোপাল পণ্ডা। এখনও বাড়িতে আছে সেই ‘জরাজীর্ণ’ বিগ্রহ। পুজো হয় বাড়ির মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা নতুন বিগ্রহে। হয় নিত্যপুজো। তবে রথযাত্রা হয় না। প্রাচীন মূর্তি আছে বন্ধ ঘরে। স্থান হয়নি মিউজিয়ামেও। গড় মধ্যস্থিত ‘রাজ্য সংরক্ষিত স্তম্ভ’-ও এখন অনাদরে। বুদ্ধিজীবী থেকে স্থানীয় মানুষ সকলের দাবি মিউজিয়ামের সংরক্ষণ করা হোক এই বিগ্রহ l

Categories
ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান

গোয়ায় ভ্রমণ করতে গিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় দশটি স্থান দেখে নিন, যা তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য

বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-

বেড়াতে কে না ভালোবাসে? বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই ভ্রমণে আসক্ত হয়ে পড়ে। কেউ পাহাড়ে, কেউ সমুদ্রে আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থানে বেড়াতে পছন্দ করেন। প্রকৃতি আমাদের জন্য কত কিছুইনা প্রস্তুত করে রেখেছে। এর কতটুকু আমরা দেখেছি? এই বিশাল পৃথিবীর আমরা খুব কমই চাক্ষুষ করেছি। যাইহোক, সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে আজ পুরো বিশ্ব আপনার নখদর্পণে, কিন্তু প্রকৃতিকে চাক্ষুষভাবে দেখা এক অন্যরকম রোমাঞ্চ, অন্যরকম অনুভূতি, যার ছাপ চিরকাল হৃদয়ে থেকে যায়। তাই আজও মানুষ বাইরে গিয়ে নেশাগ্রস্তের মতো প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করে। এমনই একটি ভ্রমণ গন্তব্য হল আমাদের দেশের অঙ্গরাজ্য গোয়া।

গোয়া দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। এটি ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজ শাসনের অধীনে ছিল। গোয়া ভারতের পশ্চিম উপকূলের একটি রাজ্য, একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস সহ একটি প্রাক্তন পর্তুগিজ উপনিবেশ। প্রায় ১৪ লক্ষ জনসংখ্যা সহ ৩৭০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত গোয়া ভারতীয় মান অনুসারে একটি ছোট রাজ্য। এটিতে ভারতীয় এবং পর্তুগিজ সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যের একটি অনন্য মিশ্রণ রয়েছে, যা প্রতি বছর আনুমানিক ২৫ লক্ষ দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে (প্রায় ৪ লক্ষ বিদেশী পর্যটক সহ)।

গোয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ হল এখানকার সৈকত। কেলেঙ্গুয়েট, অঞ্জুনা, বাটারফ্লাই, বগা সহ গোয়াতে অনেকগুলি সৈকত রয়েছে। সমুদ্র সৈকত ছাড়াও গোয়ায় দেখার মতো আরও অনেক জায়গা রয়েছে। আসুন জেনে নিই গোয়ার সেরা ১০টি স্থান সম্পর্কে-

১) আগুয়াদা দুর্গ

আগুয়াদা ফোর্ট একটি পর্তুগিজ দুর্গ। দুর্গটি সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। মান্দোভি নদী এবং আরব সাগরের মাঝখানে অবস্থিত এই দুর্গটি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। পর্যটকরা এখানে এসে মুগ্ধ হন। এটি সামনে প্রসারিত সমুদ্রের একটি শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য সরবরাহ করে। পূর্ব দিকে যাত্রা করা প্রতিটি পর্তুগিজ জাহাজ তাদের জল সরবরাহ পুনরায় পূরণ করতে ফোর্ট আগুয়াডায় একটি পিট স্টপ করবে কারণ এটি সমগ্র এশিয়ার মধ্যে মিষ্টি জলের বৃহত্তম আধার ছিল। দুর্গটি একটি দুর্দান্ত ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে সুপরিচিত। এই দুর্গে একটি প্রাচীন বাতিঘর আছে যা এশিয়ার প্রাচীনতম বাতিঘরগুলির মধ্যে একটি। এটি দুর্গের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। সেই সাথে এখানে অনেক কক্ষ আছে যা আগে কারাগার হিসাবে ব্যবহৃত হত।

২) চাপোরা দুর্গ

চাপোরা ফোর্ট গোয়ার একটি বিখ্যাত দুর্গ। স্থানীয়দের কাছে এটি দিল চাহতা হ্যায় দুর্গ নামে পরিচিত। ২০০১ সালে দিল চাহতা হ্যায় ছবির শুটিং এখানে হয়েছিল। দুর্গটি চাপোরা নদীর তীরে অবস্থিত। দুর্গটি অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী হিসেবে কাজ করছে। এটি চাপোরা নদীর কাছে একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এবং আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য এটি আদর্শ। শিলা দ্বারা সুরক্ষিত সৈকতগুলির একটি প্রাকৃতিক উপত্যকা যা সমুদ্রে একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক প্রবেশাধিকার সরবরাহ করে।

৩) থ্যালাসা

থ্যালাসার গ্রীক ট্যাভার্না গোয়ার বিখ্যাত রেস্তোরাঁগুলির মধ্যে একটি। এটি পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় স্থান। সূর্যাস্তের সময় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। থ্যালাসায় দম্পতিদের বেশি দেখা যায়।

৪) দিভার দ্বীপ

পাঞ্জিম থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, এই দ্বীপটি মালদ্বীপের মতো মনে হয়। মান্ডভি নদীর ধারে অবস্থিত স্থানগুলো পায়ে হেঁটে ঘুরে আসা যায়। ইউরোপীয় স্থাপত্য, পর্তুগিজ ল্যান্ডমার্ক এবং বিখ্যাত আওয়ার লেডি অফ কম্যাশন চার্চ সঙ্গীর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে হেঁটে দেখে আসুন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি দ্বীপ হল দিভার দ্বীপ। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে ভিড় জমান শত শত পর্যটক।

৫) দুধসাগর জলপ্রপাত

দুধসাগর জলপ্রপাত ভারতের বৃহত্তম জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতটি মোলেম জাতীয় উদ্যানের ভিতরে অবস্থিত। বর্ষাকালে জলপ্রপাতটি অবিরাম প্রবাহিত হয়। সব সময় পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।

দুধসাগর জলপ্রপাত পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত জলপ্রপাত। এটি কর্ণাটক এবং গোয়ার সীমান্তে অবস্থিত। এটি ভারতে পঞ্চম সর্বোচ্চ। প্রায় ৩০ মিটার প্রস্থের সমগ্র মান্দাভি নদীটি ৩১০ মিটার উচ্চতা থেকে বিশাল জল নিয়ে এই জলপ্রপাতটি তৈরি করেছে। এই জলপ্রপাতটি “সি অফ মিল্ক” নামেও পরিচিত।

দুধসাগর জলপ্রপাত সম্পর্কে স্থানীয় জনশ্রুতি রয়েছে যে, প্রাচীনকালে এই জলপ্রপাতের জায়গায় এক রাজার প্রাসাদ ছিল। রাজকুমারী প্রাসাদ সংলগ্ন হ্রদে স্নান করতেন এবং স্নান শেষে একটি সোনার পাত্র থেকে দুধ পান করতেন। একদিন এক রাজপুত্র যখন গাছের আড়াল থেকে উলঙ্গ রাজকন্যাকে স্নান করতে দেখছিল, তখন রাজকুমারী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজের লজ্জা লুকানোর জন্য সোনার পাত্রের দুধ সর্বাঙ্গে ঢেলে নিলেন। কথিত আছে যে, এই জলপ্রপাতটি এই দুধের প্রবাহ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।

দুধসাগর জলপ্রপাত এর জলপ্রবাহের স্বচ্ছতার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। পাহাড়ি নদীর জল পাথরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় ঘোলা নয়, বারবার পাথরে আঘাত করার ফলে তা ফেনায়িত। সত্যিই মনে হয় পাহাড় থেকে দুধ পড়ছে। সেই অর্থে এই নামকরণ সঠিক।

৬) ডোনা পাওলা

ডোনা পাওলা গোয়ার সমুদ্র সৈকতগুলির মধ্যে একটি। এটি পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। একে ভারতের প্রতিচ্ছবি বলা হয়। ডোনা পাওলা নামকরণ করা হয়েছে এখানে তৎকালীন ভাইসরয়ের কন্যা ডোনা পাওলা ডি মেনেজেসের নামে।

৭) টিটোস নাইটক্লাব

টিটোস নাইটক্লাব পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। ক্যালাঙ্গুটে অবস্থিত টিটোস গোয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত নাইটক্লাবগুলির মধ্যে একটি। ১৯৭১ সালে টিটো হেনরি ডি সুজা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পাবটি গোয়ার নাইটলাইফের সমার্থক। বগায় যেখানে পাবটি অবস্থিত তা টিটোর লেন নামে পরিচিত। টিটো লেনে যে কোনো রাতে, আপনি টিটো পাব এবং রেস্তোরাঁর বাইরে বিশাল জমায়েত দেখতে পাবেন এর দুর্দান্ত পরিবেশ এবং ডিজেগুলির দুর্দান্ত নির্বাচনের কারণে।

ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক ডিজের একটি দুর্দান্ত নির্বাচনের সাথে নৃত্যের ফ্লোরে আগুন এবং দুর্দান্ত খাবার এবং পানীয় অফার, টিটোস নিজেকে গোয়ার অন্যতম ল্যান্ডমার্ক নাইটক্লাব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গোয়ার রাজধানী পানাজি থেকে মাত্র ১৮ কিমি দূরে অবস্থিত নাইটক্লাবটি সরকারী এবং ব্যক্তিগত উভয় পরিবহন দ্বারা সহজেই অ্যাক্সেসযোগ্য। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে টিটোস শুধুমাত্র একটি নাইটক্লাব থেকে প্রসারিত হয়েছে। এখন দ্য কোর্টইয়ার্ড নামে একটি নিজস্ব ওপেন-এয়ার রেস্তোরাঁ এবং ম্যাম্বো ক্যাফে নামে একটি নতুন ক্যাফে চালাচ্ছে৷ টিটো’স নাইটক্লাব তার প্রথম তলায় ব্যক্তিগত পার্টিগুলিকে হোস্ট করার সুযোগও দেয়, যা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত পার্টিগুলির জন্য উৎসর্গীকৃত৷ নাইটক্লাব হল অবসরযাপনের নিখুঁত জায়গা। তাই, টিটোর নাইটক্লাব গোয়ার বিখ্যাত নাইটক্লাবগুলির মধ্যে একটি। এটি পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় স্থান। তবে নাইটক্লাবে তরুণদের বেশি দেখা যায়।

৮) বাঞ্জি জাম্পিং

এটি একটি জনপ্রিয় সৈকত। প্যারাসাইক্লিং সহ আরও অনেক বিনোদনমূলক কার্যক্রম রয়েছে। বাঞ্জি জাম্পিং ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি একটি প্রিয় জায়গা।

৯) ক্যাসিনো

এটি গোয়াতে অবস্থিত একটি সৈকত। ক্যাসিনো বিচ মান্দোভি নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি স্থান। প্রতি বছর এখানে শত শত মানুষ আসেন।

১০) ক্যান্ডোলিম বিচ

গোয়ার দীর্ঘতম সৈকতগুলির মধ্যে একটি, ক্যান্ডোলিম বিচকে কখনও কখনও রাজ্যের অন্যান্য জনপ্রিয় সৈকতের প্রবেশদ্বার বলা হয়। ফোর্ট আগুয়াদা থেকে শুরু হওয়া সৈকত তুলনামূলকভাবে শান্ত এবং ল্যাজিংয়ের জন্য ওয়াটার স্পোর্টস প্রেমীদের জন্য প্যারাসেলিং এবং ওয়াটার স্কিইং এর মতো কিছু কার্যক্রম রয়েছে।

পুনের রজনীশ আশ্রমের লোকেদের মধ্যে সৈকতটি বেশ জনপ্রিয় যারা এখানে অল্প বিরতির জন্য আসেন। ক্যান্ডোলিম-ক্যালাংগুট রোড পর্যটকদের কেনাকাটা এবং আড্ডা দেওয়ার জন্য অনেক দোকান এবং রেস্তোরাঁর সাথে সারিবদ্ধ। গোয়াতে যাঁরা শান্ত নিরিবিলি থাকার জন্য স্থান খুঁজছেন তাঁরা সাধারণত ক্যান্ডোলিম বিচের কাছে তাঁদের হোটেল বুক করতে পারেন।

Categories
ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান

আর ফ্লাইটের ব্যয়বহুল খরচা নয়, এবার দিল্লি থেকে সড়কপথেই পৌঁছে যাওয়া যাবে স্বপ্নের শহর লন্ডনে

বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-

ফ্লাইটের টিকিট কাটতে গিয়ে পকেট গড়ের মাঠ হয়ে যায়, শুধুমাত্র এই কারণে অনেকেই বিদেশ যাত্রাকে ভয় পান। ভ্রমণের অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র যাতায়াতের খরচাই এত বেশি হয়ে যায় যে সেটা বাজেটের বাইরে চলে যায়। যদি এমন হতো যে ফ্লাইটে থেকে অন্তত কিছু কম খরচায় সড়কপথেই বিদেশ যাওয়া যেত তাহলে কেমন হতো! এর জন্য পেরোতে হবে প্রায় ১৩টা দেশ, আর ভিসা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকলেই সমাধান সম্ভব।

দিল্লি থেকে লন্ডন গাড়িতে চেপে সড়কপথে ১৩টা দেশ পেরিয়ে ভিসা এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে কিভাবে পৌঁছানো সম্ভব, সেই বিষয়ে বিশদে আলোচনা করা হলো :-

দিল্লি থেকে লন্ডন পৌঁছতে গেলে যে ১৩টি দেশ পেরোতে হবে সেগুলি হল ভারত-> মায়ানমার-> চীন-> কিরগিজস্তান-> উজবেকিস্তান-> কাজাখস্তান-> রাশিয়া-> বেলারুশ-> পোল্যান্ড-> জার্মানি-> নেদারল্যান্ডস-> বেলজিয়াম-> ফ্রান্স-> সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারত থেকে পাকিস্তান ও চীন হয়ে লন্ডনে পৌঁছানো সবথেকে সহজ রাস্তা, সময়ও লাগবে কম। কিন্তু পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে যাওয়াটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। তার ওপর চীনের মধ্যে দিয়েও সরাসরি যাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে মায়ানমার হয়ে যাওয়াটাই সবথেকে সুরক্ষিত। এক্ষেত্রে সময় লাগবে ৬ সপ্তাহ। এপ্রিল মাসে যাওয়াই সবথেকে ভালো সময়। কারণ এপ্রিল মাসে ভারত থেকে যাত্রা শুরু হলে লন্ডনে পৌঁছানোর সময় আর ওখানে শীতকাল থাকবে না।

এবার আসা যাক কি কি গুরুত্বপূর্ণ নথি লাগবে ভারতবর্ষ থেকে সড়কপথে লন্ডন যাত্রাকালে;

প্রথমেই মোট চারটে ভিসা লাগবে ইরান, তুরস্ক, সেনজেন (রোমানিয়া থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত ইউরোপ) এবং সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র।

‘কারনেত দে পাসাজ’ নামে একটি বিশেষ ধরনের কার পারমিট করাতে হবে, যাতে যত দেশে আপনি চাইবেন গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন।

যেহেতু, পাকিস্তান ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা দেয় না তাই সরাসরি ইরানে যেতে হবে।

ইরানে যেতে হলে প্রথমে মুম্বাই থেকে ইরানের জাহাজ বন্দর আব্বাস পর্যন্ত কার্গো জাহাজে করে গাড়িকে পরিবহন মারফত নিয়ে যেতে হবে।

তেহেরান বা সিরাজ পর্যন্ত আপনাকে ফ্লাইটে যেতে হবে। এরপর আব্বাস বন্দর থেকে গাড়িটি নিয়ে নিতে হবে।

এরপর আব্বাস বন্দর থেকে তাব্রিজ পর্যন্ত গাড়িতে চলুন। তারপরে তুরস্কের লেক ভ্যান ধরে এগিয়ে চলুন। এখান থেকে আঙ্কারা, ইস্তানবুলের দিকে যেতে পারেন।

এর পরের রাস্তাটি বেশ মনোরম। ফ্রান্স হয়ে ক্যালাইস থেকে ডোভার পর্যন্ত চ্যানেল টানেলের মাধ্যমে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে যাওয়া যায়।

তারপর ডোভার থেকে গাড়ি চালিয়ে সোজা পৌঁছে যান স্বপ্ন শহর লন্ডন।

ভারত থেকে লন্ডন ফ্লাইটে যেতে গেলে খরচা যা হবে তা একান্তই আপনার ওপর নির্ভর করছে। আপনি যদি কোনো ট্রাভেল এজেন্সির মারফত টিকিট কাটা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন তাহলে আপনার খরচা প্রায় ১৫% বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনার খরচ হবে মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মতন। এদিকে আপনি যদি গাড়িতে যান গাড়ির মাইলেজ এবং গ্যাসের খরচের ওপর খরচা নির্ভর করবে। এর সাথে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত যোগ করুন। আপনি প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারেন। এইভাবে আপনি আপনার স্বপ্নের ট্রিপটি পরিকল্পনা করতে পারেন।

লন্ডন শহরে ঘুরে দেখার মত অনেক কিছু আছে। এখানে আপনি বাকিংহাম প্যালেস, দ্য লন্ডন আই, লন্ডন টাওয়ার, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, ব্রিটিশ মিউজিয়াম, বিগ বেন এন্ড পার্লামেন্ট, ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে, ন্যাশনাল গ্যালারি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিও, টাওয়ার ব্রিজ, মাদাম তুসো মিউজিয়াম এবং আরো অনেক কিছু দেখতে পারবেন। এ যেন এক স্বপ্নের সফর হয়ে উঠবে আপনার জীবনে।

এমনকি ভারত থেকে লন্ডন যাওয়ার পথে যে ১৩টি দেশ পড়বে, সেগুলো আপনি ঘুরে দেখতে পারেন। তবে আর ভাবনা কিসের? ব্যাগপত্র গুছিয়ে দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চারের জন্য প্রস্তুত হয়ে নিন। আর মাত্র ৬ সপ্তাহ পাড়ি দিয়েই পৌঁছে যান স্বপ্নের শহর লন্ডন।

Categories
ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান

এবার দিন দুয়েকের ছুটি পেলেই ঘুরে আসুন নতুন সমুদ্রতট হেনরি আইল্যান্ড

বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-

‘বাঙালি’ আর ‘ভ্রমণ’ এই দুটি শব্দকে শত চেষ্টা করলেও আলাদা করা কখনোই সম্ভব নয়। ঘুরতে যেতে পছন্দ করেননা এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু অনেক সময়ই পরিস্থিতির চাপে লম্বা ছুটি নিয়ে বেড়াতে যাওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভবপর হয় না। ব্যস্ত জীবন থেকে দুদিনের ছুটি পেলেই মনটা আনচান করে ওঠে কোথাও যাওয়ার জন্য। আর তখন মনে পড়ে দীঘা, মন্দারমনি, তাজপুরের নাম। এসব জায়গায় তো অনেক গেলেন। এবার চলুন ঘুরে আসি একটা নতুন জায়গা থেকে। কলকাতার ভীষণ কাছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সমুদ্র ঘেরা একটি ছোট্ট দ্বীপ হেনরি আইল্যান্ড। এখানকার অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝাউবনের সমাহার, সমুদ্রের রণ হুংকার, তার সাথে ম্যানগ্রোভের চোখ জোড়ানো শোভা; মন ভরানোর পক্ষে যথেষ্ট।

কথায় আছে, “বাঙালির পায়ের তলায় সরষে”। তাই দু-তিন দিনের ছুটিতে দীঘা, মন্দারমনি অথবা পুরুলিয়া, শান্তিনিকেতনের মতো জায়গায় মানুষ ছুটে গেছে বারে বারে এক মুঠো অক্সিজেনের সন্ধানে। কিন্তু এবার হেনরি আইল্যান্ডের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খোঁজ আপনাকে দিচ্ছি, যা আপনার সারা বছরের রসদ হিসাবে কাজ করবে। বঙ্গোপসাগরে ঘেরা নির্জন এই বালুকাবেলা এক অপার্থিব নৈসর্গিক সুখের অনুভূতি এনে দেবে আপনাকে। তাই ঝটিকা সফর সারতে ঘুরে আসা যেতেই পারে হেনরি আইল্যান্ড।

কিভাবে যাবেন :- ট্রেন মাধ্যমে যেতে গেলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে অথবা বাস পরিষেবা দ্বারাও ধর্মতলা থেকে পৌঁছে যাওয়া যায় নামখানায়। পূর্বে নামখানা থেকে বকখালি অথবা হেনরি আইল্যান্ড যেতে গেলে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদী পেরিয়ে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমানে নদীর ওপর সুদৃশ্যমান ব্রিজ দিয়ে নামখানা থেকে সোজা গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় হেনরি আইল্যান্ডে।

কোথায় থাকবেন :- কিছু বছর আগেও হেনরি আইল্যান্ডে থাকার বন্দোবস্ত সেভাবে খুব একটা ছিল না। পর্যটকরা গিয়ে ঘুরে আবার বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জেই চলে আসতেন। তবে এখন সেই সমস্যা আর নেই। সরকারি আবাসন বলতে হেনরি আইল্যান্ডের মৎস্য দপ্তরের কটেজ রয়েছে। যেখানে থাকার সু বন্দোবস্ত রয়েছে। তাছাড়াও বেশ কয়েকটি বেসরকারি হোটেল এখানে গড়ে উঠেছে। খুব কম খরচে মাত্র হাজার টাকার এপাশ ওপাশে এই হোটেলগুলিতে থাকা খাওয়ার সু বন্দোবস্ত রয়েছে।

কি দেখবেন :- কলকাতার এত কাছে অবস্থিত নির্জন নয়নাভিরাম এই সমুদ্রতট জীবনে একবার দেখলে আর কখনো ভুলতে পারবেন না। সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে সবুজ ঝাউবনের সমাহার হৃদয়কে উদ্বেলিত করতে পারে। ম্যানগ্রোভ অরণ্যে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া গাছের সমাহার দেখা যাবে। একদিকে বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি অন্যদিকে ম্যানগ্রোভ আর ঝাউবনের সবুজ সমাহার আপনাকে সতেজ করে তুলবে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, দীঘা মন্দারমনি তো অনেক হলো। এবার দিন দুয়েকের ছুটি পেলেই একবার অন্তত ঘুরে আসুন হেনরি আইল্যান্ড।

Categories
ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান

সিকিম ভ্রমণে গিয়ে সর্বস্বান্ত বহু পর্যটক! পর্যটকদের সতর্ক করল সিকিম সরকার

বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-  

ভ্রমণ করতে ভালবাসেন! বিশেষ করে যদি পাহাড় হয়! হঠাৎ করে প্ল্যান করেই বেরিয়ে পড়েন! বেশির ভাগ সময়ই আপনার হাতে সময় কম থাকে! তাই ট্যুর অপারেটরদের ওপরেই সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন! প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর কি হ্যাঁ? তাহলে আপনাকে আগে সাবধান হতে হবে।

আসলে, দুই ধরনের মানুষ ভ্রমণ করতে যান। একদল ভ্রমণকারী, আরেক দল পর্যটক। যাঁরা ভ্রমণকারী তাঁরা নিজেরাই সব ব্যবস্থা করতে পছন্দ করেন। আনকোরা জায়গায় ঘুরে স্থানীয়দের সাথে মিশতে এবং এলাকার খাবার ও সংস্কৃতির স্বাদ নিতে পছন্দ করেন। কিন্তু পর্যটক একটি ভিন্ন বিষয়।

আসলে পর্যটক মানেই কম সময়ের মধ্যে ভ্রমণ। বেশিরভাগ পর্যটকই সবকিছু পরিপাটি চান। গরম জল, হাতের কাছে বাড়ির স্বাদের গরম খাবার, যা চান সবই নিখুঁত, ঠিক বাড়ির মতো। তাই অনেকে ভ্রমণের সময় ট্যুর অপারেটরদের উপর নির্ভর করেন, আর এখানেই বিপদ।

সিকিম সরকার বলছে যে সিকিম ভ্রমণের পরিকল্পনা করা অনেক পর্যটক গত কয়েক মাসে চোরের শিকার হয়েছেন। অনলাইনে ট্যুর অপারেটর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই বিপদ ডেকে এনেছেন। কেউ কেউ সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

সিকিম মানেই বাঙালির ভালোবাসার জায়গা। ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে অনেকেই বছরের ছুটির সময়টা সিকিম ভ্রমণে কাটান। কিন্তু আপনার ভ্রমণপিপাসু মনটাই অনলাইন চোরেদের অস্ত্র। আর হুট করে বুকিং পেতে চাইলে ওদের তো সোনায় সোহাগা। তাই বুকিং করার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না।

সিকিম সরকার জানিয়েছে, www. sikkimtourism.gov.in ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত ট্যুর অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে বুকিং করা সবচাইতে ভাল। তা না হলে পর্যটকদের নিজেদের গবেষনা করে তবেই বুকিং করা উচিত! একের পর এক প্রতারণার খবরে উদ্বিগ্ন সিকিম সরকার!

Categories
ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান

পারিবারিক পিকনিকে যাবেন? ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে ঘেরা গোবরডাঙ্গা ঘুরে আসতে পারেন

বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-

গরম কাপড় পরার বিশেষ সুযোগ না থাকলেও ডিসেম্বরের শুরু থেকেই উৎসবের আমেজ শুরু হয়ে যায়। শীত এলেই পিকনিক পিকনিক করে ওঠে বাঙালির মন। শীতের মেজাজে পিকনিক করার এক অন্যরকম অনুভূতি। এক শীতের সকালে বাড়ির সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেই হল। কিন্তু বেরিয়ে তো গেলেন, কোথায় যাবেন বলে ঠিক করলেন?

এই রাজ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পিকনিক স্পট। অনেক লোক এমন একটি জায়গা বেছে নেয় যা খুব বেশি দূরে নয়। উত্তর ২৪ পরগণার গোবরডাঙা এমনই একটি জায়গা। এই শীতে বাড়ির সবাইকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে পারেন গোবরডাঙায়। সারা বছরের শহুরে ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে এখানে আসতেই পারেন।

গোবরডাঙ্গা মফস্বল শহর। আকারে ছোট হলেও দেশভাগের অনেক গল্প জড়িয়ে আছে এই জায়গার সঙ্গে। গোবরডাঙার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে যমুনা নদী। নদীর ওপর কাঠের সেতু, তার পাশেই জমিদার বাড়ির সিংহ দরজা, ঠিক পেছনেই প্রাচীন নকশা ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে জমিদার বাড়ি। গোবরডাঙ্গার বাতাসে নীরবতা কথা বলে। নিরিবিলি শহর গোবরডাঙা। সারা বছরের শহুরে ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে এখানে আসতে পারেন। সংস্কৃতি এখানে প্রতিটি কোণে প্রবাহিত। এখানে গান ও নাচের চর্চা আছে, এখানে নাটকের ইতিহাস প্রায় ১৪০ বছরের। এই শহরকে বাদ দিলে রাজ্যের থিয়েটারের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ‘ভিলেজ অফ থিয়েটার’ নামে পরিচিত গোবরডাঙ্গার বাসিন্দারা একে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এই শহর আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না।

বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের শিব মন্দির ও স্নানের ঘাট, গোবরডাঙ্গার মুখোপাধ্যায় পরিবারের প্রাসাদ (জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত), প্রসন্নময়ী কালী ও দ্বাদশ শিব মন্দির, সূর্য ঘড়ি, পরী হল, ফ্রেঞ্চ ক্লক, চাইনিজ মিংভাজ বা ফুলদানি সিংহদ্বার, নহবতখানা, গন্ধর্বপুরের ব্রাহ্ম মন্দির, সাহাপুরের মঙ্গলালয়, নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ, গাইপুরের ওলাবিবির দরগা, কুন্ডু পুকুরের শিব মন্দির, খাঁটুরার জোড়া শিব মন্দির, গড়পাড়া এবং রঘুনাথপুরের মসজিদের মতো অনেক স্থাপত্য ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে।

কোথায় পিকনিক করা যাবে?

গোবরডাঙ্গা পৌরসভার উদ্যোগে প্রায় ৩৪ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘কঙ্কনা রিক্রিয়েশন পার্ক’। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কঙ্কনা নদী। শীতের রোদ উপভোগ করতে এখানে আসতে পারেন, ভালো লাগবে। এই পার্কে প্রবেশ ফি খুবই কম, মাথা পিছু ২০ টাকা। কিন্তু চড়ুইভাতির জন্য আলাদাভাবে ৫০০ টাকা দিতে হয়।

বাগানের আঙিনার মধ্যে চারটি ঘর আছে। কোলাহল থেকে একটু ক্লান্ত বোধ করলে সেখানে বিশ্রাম নিতে পারেন। আপনি রান্না করে নিয়ে যেতে পারেন অথবা আপনি আপনার সাথে রাঁধুনীও নিয়ে যেতে পারেন। রান্না করার ব্যবস্থাও আছে। পার্কটি একটি বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত, তাই আপনি আপনার ইচ্ছামতো ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট খেলতে পারবেন। বাচ্চারাও এমন প্রশস্ত জায়গা পছন্দ করবে। কিন্তু পার্কটি সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। তার আগেই পিকনিকের পাট চুকিয়ে ফেলতে হবে।

কিভাবে যাব?

শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যে কোনও লোকাল ট্রেন ধরুন এবং গোবরডাঙ্গা স্টেশনে নামুন। তারপর স্টেশন থেকে টোটো করে এই পার্কে পৌঁছোতে হবে। এছাড়াও স্টেশনে পৌঁছে স্থানীয় ব্যক্তিকে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

Categories
ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান

কলকাতা শহরের রাজারহাট নিউটাউনে যেন এক অন্যরকম জগৎ, সেখানে কী আছে…! চলুন দেখি

বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-

মর্মাহত? শহর কি পাথর হয়ে গেছে? কিন্তু এর ওষুধ শহরের এই অংশে। লাইব্রেরি, রেস্তোরাঁ, বাগান, মিউজিয়াম সহ পেটপুজোর নানা আয়োজন এখানে। কলকাতার রাজারহাট নিউ টাউন শহরের মধ্যেই যেন এক অন্যরকম জগৎ।

নিউটাউনের অন্যতম আকর্ষণ ইকো ট্যুরিজম পার্ক। ‘প্রকৃতি তীর্থ’ নামে পরিচিত এই পার্কটি এখনও পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম পার্ক। পার্কটির তিনটি অংশ রয়েছে, পরিবেশগত অঞ্চল যেমন জলাভূমি এবং তৃণভূমি, থিম গার্ডেন, খোলা জায়গা এবং বিনোদনমূলক স্থান। আগ্রার তাজমহল থেকে মিশরের পিরামিড পর্যন্ত, আপনি থিম পার্কটি ঘুরে দেখতে পারেন, যা বিশ্বের বিখ্যাত আশ্চর্যের আদলে তৈরি।

এখানে আপনি সাইকেল চালানো, প্যাডেল বোটিং, শিকারায় ঘোরাঘুরি, পাখি দেখা, তীরন্দাজ, রোয়িং, বন্দুক শুটিং ইত্যাদির মতো বিভিন্ন কার্যকলাপে লিপ্ত হতে পারেন। এখানে একটি গোলাপ বাগান রয়েছে। এখানকার প্রজাপতি বাগান এবং মিউজিক্যাল ফোয়ারাগুলিও নিঃশর্ত প্রশান্তিদায়ক। ইকো পার্কের মধ্যেই ‘সবুজসাথী’ নামে একটি দ্বীপ রয়েছে। দ্বীপের মধ্যে একটি ২৮০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে বিল্ডিং রয়েছে যা কাঁচের তৈরি। এই চমৎকার কাঁচের ঘর ছাড়াও ‘ক্যাফে একান্তে’ নামে একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। বিখ্যাত বাংলার তেলেভাজা থেকে শুরু করে চাইনিজ পর্যন্ত নানা ধরনের খাবার রয়েছে ওই রেস্তোরাঁয়।

মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম ইকো পার্কের বিপরীতে অবস্থিত। এটি কলকাতা শহরের একটি নতুন আকর্ষণ। লন্ডনের মাদাম তুসোর ‘মোম’ জাদুঘরের আদলে তৈরি, আপনি এই জাদুঘরে বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রমাণ আকারের মোমের মূর্তি দেখতে পাবেন। বাঙালির মিষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তৈরি হয়েছে নিউ টাউনস সুইট হাব। ইকো পার্কের তৃতীয় গেটের কাছে এই হাবটিতে আপনি সর্বদা বাংলার ঐতিহ্যবাহী এবং বিরল মিষ্টি এক ছাদের নীচে খুঁজে পেতে পারেন।

এই মিষ্টি হাবে আপনি কলকাতার ১১টি বিখ্যাত দোকান থেকে মিষ্টি পাবেন। এছাড়া বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, বহরমপুরের ছানাবড়া, কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত সরপুরিয়া, সরভাজা প্রভৃতি এখানে আপনি প্রায় প্রতিদিনই পাবেন। এছাড়াও এখানে রবীন্দ্রতীর্থ রয়েছে; এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি রবীন্দ্রনাথের জীবনের বিভিন্ন দিক, চিন্তাভাবনা, নীতি এবং সামগ্রিক শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এখানে একটি থিয়েটার, আর্ট গ্যালারি এমনকি একটি সিনেমা হলও রয়েছে। এখানে নিয়মিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই রবীন্দ্র তীর্থে প্রবেশের জন্য টিকিট লাগে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাউন্টার খোলা থাকে। তবে এখানে লাইব্রেরিতে প্রবেশের জন্য অনুমতি লাগে।

নজরুল তীর্থ কাজী নজরুল ইসলামকে নিবেদিত একটি সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কেন্দ্র। এর স্থাপত্যে বিভিন্ন ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, ডিজাইন করেছেন স্থপতি অবিন চৌধুরী। এখানে কবিদের ব্যবহৃত প্রসিদ্ধ শব্দগুলো খোদাই করা আদিবাসী ভাস্কর্য সহ একটি দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা থেকে ‘উন্নত মম শির’ শব্দ তিনটি সংযুক্ত হয়েছে। এখানে সাতটি ব্লকের মধ্যে তিনটি জাদুঘর রয়েছে, একটি ব্লকে একটি গ্রন্থাগার এবং অন্যটিতে একটি থিয়েটার রয়েছে। বর্তমানে, এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি আংশিকভাবে একটি সিনেমা হল, প্রদর্শনী এবং অভিনয়ের জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

নিউ টাউন লাইব্রেরিটি নজরুল তীর্থেরই দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলা দখল করে আছে। এই লাইব্রেরিটিও দেখার মতো একটি জায়গা। এখানে বইগুলো ডিজিটাল ক্যাটালগের মাধ্যমে পাওয়া যায়। লাইব্রেরিটি ন্যাশনাল ডিজিটাল লাইব্রেরি এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাথে যৌথভাবে পরিচালিত হয়। নিউ টাউন লাইব্রেরি মানুষকে বইয়ের কাছে ফিরিয়ে আনতে চায়। এর সমসাময়িক অভ্যন্তরীণ অন্দরসাজ নতুন প্রজন্মের কাছে পড়ার ভালবাসা ফিরিয়ে আনবে নিশ্চিত। এই গ্রন্থাগারটি তিনটি বিভাগে বিভক্ত – সাধারণ, শিশু এবং কিশোর। দ্বিতীয় তলায় শিশু ও কিশোর বিভাগ এবং অডিও ভিজ্যুয়াল রুম রয়েছে। তৃতীয় তলায় একটি সিনিয়র রিডিং রুম, দুটি অডিও-ভিজ্যুয়াল রুম এবং একটি ক্যাফে এবং লাউঞ্জ রয়েছে।

বরফে ঢাকা পাহাড়ে যেতে না পারলেও স্নো পার্কে ঘুরে আসতে পারেন। কলকাতার নিউটাউনে অ্যাক্সিস মলের মধ্যে অবস্থিত এই পার্কটি সব বয়সের মানুষ উপভোগ করবেন। এছাড়াও সবার উপযোগী বিভিন্ন রাইড রয়েছে। পুরো পার্কটি বরফের টুকরো দিয়ে আচ্ছাদিত এবং এখানে আপনি অন্য সবার সাথে বরফ মানুষ তৈরির আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। একটি যুক্তিসঙ্গত প্রবেশ ফি দিয়ে আপনি এখানে আপনার পরিবারের সাথে বেশ অনেকটা সময় কাটাতে পারেন। কলকাতা কফি হাউসের আদলে নিউ টাউনে সম্প্রতি খোলা হয়েছে নিউ টাউন কফি হাউস।

দুই তলায় বসার ভালো ব্যবস্থা আছে। প্রি-বুকিং সুবিধার জন্য সিট পাওয়ার আর কোনো চিন্তা নেই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁটির জানালার কাছে একটি ছোট অধ্যয়নের জায়গাও রয়েছে। মান্না দে’র বিখ্যাত গান ‘কফি হাউস’-এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি সুন্দর দেয়াল-শিল্প দেখা যায়। নিউ টাউন কফি হাউসে পরিবেশকদের পোশাক আসল কফি হাউসের মতোই। এর স্থাপত্য বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। আটটি বাঁশি বাদকের মূর্তি এখানে স্তম্ভ বহন করে। স্থাপত্যটি হায়দ্রাবাদের একজন বিখ্যাত স্থপতি দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল। সন্ধ্যায়, নিউ টাউন কফি হাউস অচিন-নগরের মতো আলোকিত হয়।

‘স্বপ্ন ভোর সিনিয়র্স পার্ক’ পঞ্চাশের বেশি নাগরিকদের জন্য একটি ক্লাব। এখানে ক্লাবের সদস্যদের জন্য লাইব্রেরি, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ইনডোর গেমস, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যোগব্যায়াম, নারী-পুরুষের সঙ্গীত শিক্ষা, সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এখানে নিউটাউন বইমেলাও হয়ে আসছে। প্রায় চার একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্কে দুটি ব্যাঙ্কোয়েট হল এবং একটি খোলা সবুজ লন রয়েছে যা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। অন্য পাশ সম্পূর্ণ সবুজ। চারটি সোনার বুদ্ধ মূর্তি পার্কে প্রাধান্য পেয়েছে। এখানে একটি বড় অ্যাকোয়ারিয়াম পার্কের অন্যতম আকর্ষণ।

কলকাতা গেট বা বিশ্ববাংলা গেট নিউ টাউনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্থান। একটি ঝুলন্ত রেস্টুরেন্টও রয়েছে এখানে। এখানে যাদুঘর এবং রেস্তোরাঁটি কাঁচে ঘেরা, যেখানে ‘নতুন কলকাতা’ আপনার সামনে প্রসারিত। পুরো জায়গাটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এখানকার রেস্টুরেন্টে বাঙালি ও অন্যান্য খাবার পাওয়া যায়। বিশ্ববাংলা গেট ও ঝুলন্ত রেস্তোরাঁয় দেশের বাইরে থেকেও পর্যটকরা আসেন।

Categories
ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান

শীতের ছুটিতে গনগনি ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অফ বেঙ্গল’ থেকে ঘুরে আসুন

বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-

সারা বিশ্ব থেকে অনেক মানুষ প্রতি বছর গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ভিড় করে। বাংলায় সেই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের একটি ছোট্ট সংস্করণ রয়েছে। জায়গাটির নাম গনগনি। কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টা দূরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শীলাবতী নদীর তীরে অবস্থিত এই জায়গাটিকে ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অফ বেঙ্গল’ বলা হয়। যদি রুক্ষ ভূখণ্ড এবং জঙ্গল আপনার প্রিয় হয়, তাহলে গনগনি আপনার জন্য আদর্শ।

শীলাবতী নদী তার গতিপথ ধরে এই ভূমিরূপ তৈরি করেছে; কোথাও গুহা, কোথাও অচেনা প্রাণীর মুখ। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন যে, বকাসুর এখানে একটি গুহায় বাস করতেন এবং ভীম তাঁকে হত্যা করেছিলেন। আবার এ অঞ্চলের সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসও জড়িয়ে আছে। সূর্যাস্তের সময় শীলাবতীর রূপ মোহনীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু সেই দৃশ্য দেখতে হলে সূর্যাস্তের আগে নদী তীর থেকে উঠে আসতে হবে। তবে শীতকালে এখানে পিকনিক করতে অনেকেই আসেন। পিকনিকের পর অনেকেই খাবারের প্লেট থেকে আবর্জনা সবকিছু নদীতে ফেলে দেন। এই কারণে জায়গাটির মর্যাদা কিছুটা হলেও নষ্ট হয়েছে।

কিভাবে যাব

কলকাতা থেকে সড়কপথে যেতে চাইলে আরামবাগ হয়ে যেতে পারেন। অথবা কোলাঘাট, শালবনি হয়ে চন্দ্রকোনা রোড হয়ে গনগনি পৌঁছাতে পারেন। দ্বিতীয় রুটটি কিলোমিটারে কিছুটা দীর্ঘ কিন্তু মোটামুটি একই সময় নেয়। যাঁরা ট্রেনে যাবেন, তাঁদের রূপসী বাংলা বা আরণ্যকের মতো পুরুলিয়াগামী ট্রেনে উঠতে হবে এবং গড়বেতা স্টেশনে নামতে হবে। স্টেশন থেকে রিকশা বা টোটোতে কলেজ মোড়। কলেজ মোড় থেকে গনগনি দেড় কিলোমিটার। হেঁটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে পারেন।

কোথায় থাকবো

গনগনিতে থাকার বিশেষ জায়গা নেই। সম্প্রতি পর্যটন বিভাগের উদ্যোগে পর্যটকদের আবাসন ও নজর মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কাজ এগিয়ে চললেও কবে নাগাদ পুরোপুরি চালু হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই বেশির ভাগ পর্যটক গড়বেতায় রাত্রিবাস করেন। এছাড়া কলেজ মোড় যাওয়ার পথে রয়েছে একটি আশ্রম। রাতেও অনেক মানুষ সেখানে অবস্থান করেন।

Categories
ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান

দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে এখন থেকে হেলিকপ্টারে চড়ার সুযোগ পাবেন, পর্যটকদের জন্য সুখবর

বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-

বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন দার্জিলিং ও পাহাড়ের আশপাশের এলাকাগুলোতে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দাদের। পাহাড়ের সৌন্দর্য ও আকর্ষণ বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সময়ে সময়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

ভারতীয় রেলের ভিস্তাডোম কোচের ট্যুরিস্ট স্পেশাল ট্রেন পাহাড়ে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল একটা সময়। এবার দার্জিলিংয়ের আলাদা আকর্ষণ হয়ে উঠছে হেলিকপ্টার। এখন দার্জিলিংয়ে হেলিকপ্টার পরিষেবা শুরু হচ্ছে। ফলে পাহাড়ের শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য এখন আকাশ থেকে উপভোগ করা যাবে।

বাংলায় পর্যটন শিল্প বাড়ানোর লক্ষ্যে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই পদক্ষেপটি ৩১ বছর পর পুনরায় নেওয়া হল। মিরিকে এই পরিষেবা ৩১ বছর পর ফিরে দেখা যাবে। মিরিকে একটি হেলিপ্যাড তৈরি করা যায় কিনা তা দেখার জন্য কলকাতার ফ্লাই ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে একটি হেলিকপ্টার মিরিকে অবতরণ করানো হয়েছিল।

জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পর্যটন বিভাগ এবং কলকাতার ফ্লাই ট্রেনিং ইনস্টিটিউট যৌথভাবে দার্জিলিংয়ে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করা যায় কিনা তা দেখার উদ্যোগ নিচ্ছে। কারণ এই হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করা গেলে পর্যটনে দার্জিলিং-এর ভূমিকা আলাদা হয়ে দাঁড়াবে।

মিরিকে শেষ হেলিকপ্টার অবতরণ করেছিল ১৯৯১ সালে। সেই সময়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আর ভেঙ্কটারমন মিরিক পরিদর্শনে গেলে হেলিকপ্টার অবতরণ করেছিল। শিলিগুড়ি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর ৯:৪৫ মিনিটে হেলিকপ্টারটি মিরিকে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। রাজ্য আশাবাদী যে, সফল অবতরণের ফলে হেলিকপ্টার পরিষেবা শুরু করা যাবে।

Categories
ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান

কার্তিক ঠাকুরের জন্ম, ইতিহাস ও গল্প এক নজরে

বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-

পৌরাণিক মতে, হিন্দুদের যুদ্ধ দেবতার নাম হল কার্তিকেয় বা কার্তিক। শিব-পার্বতীর সন্তান কার্তিকের আরেকটি নাম হল স্কন্দ। উল্লেখ্য, কার্তিক কিন্তু কোনো বৈদিক দেবতা নন, তিনি হলেন পৌরাণিক দেবতা। প্রাচীন ভারতের সর্বত্র এই প্রাচীন দেবতা কার্তিকের পুজো প্রচলিত ছিল। অন্যান্য হিন্দু দেবদেবীর মতো কার্তিকেরও একাধিক নাম রয়েছে। যেমন, কৃত্তিকাসুত, আম্বিকেয়, নমুচি, মুরুগান, শিখিধ্বজ, অগ্নিজ, বাহুলেয়, ক্রৌঞ্চারতি, শর্জ, তারকারি বা তারকাসুরমর্দী, শক্তিপাণি, বিশাখ, ষড়ানন, গুহ, ষান্মাতুর, কুমার, সৌরসেনা, দেবসেনাপতি, গৌরীসুত, আগ্নিক, ভৈরবসুতানুজ ইত্যাদি। পুরানে বর্ণিত আছে, কার্তিকের গায়ের রং হলুদ বর্ণ এবং তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল তিনি চিরকুমার। তবে পুরানে আবার কিছু ক্ষেত্রে তাঁর বিবাহেরও উল্লেখ পাওয়া যায়।

কার্তিকের বাহন ময়ূরের মধ্যে সৌন্দর্য এবং শৌর্য এই দুটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। কার্তিকের ছয়টি মাথা বলে তাঁকে ষড়ানন বলা হয়। তাঁর পাঁচটি ইন্দ্রিয় চোখ, কান, নাক, জিভ, ত্বক এবং একাগ্রমন নিয়ে তিনি যুদ্ধ করেন। তাঁর হাতে থাকে বর্শা, তীর, ধনুকের মতো অস্ত্র। কোনো কোনো মতে মানব জীবনের ষড়রিপু কাম, ক্রো,ধ লোভ, মদ, মোহ, মাৎসর্যকে সংবরণ করে সদা যুদ্ধক্ষেত্রে সজাগ থাকেন কুমার কার্তিক। বাংলায় কার্তিক মাসের সংক্রান্তির দিন কার্তিক পুজো করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়া, বাঁশবেড়িয়া, কাটোয়া অঞ্চলে কার্তিক পুজো বিশেষ প্রসিদ্ধ। তবে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে কার্তিক পূজার জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমেছে। বাংলার গণিকা সমাজে কার্তিক পুজোর বিশেষ সমাদর রয়েছে। দুর্গা পূজার সময়ও কার্তিক পুজো হয়ে থাকে। কলকাতায় কার্তিক ঠাকুরের মন্দির রয়েছে।
কার্তিক ঠাকুরের ছয়টি মাথা, আবার স্ত্রীর নামও ষষ্ঠী। তাই বলা যায় কার্তিক ঠাকুরের সঙ্গে ছয় সংখ্যাটা বেশ ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সন্তান ভূমিষ্ঠ থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত সমস্ত বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন তিনি। তাঁর কৃপা পেলে পুত্রলাভ এবং ধনলাভ হয়। সেজন্য বিবাহিত দম্পতি সন্তান লাভের আশায় কার্তিক পুজো করে থাকেন। বাঙ্গালীদের মধ্যে এই বিবাহিত দম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ফেলার একটা ধুম দেখা যায়। কাটোয়ার কার্তিকের লড়াই খুব বিখ্যাত। কার্তিক পুজোর দিন কাটোয়ায় বড়োসড়ো মিছিল বের হয়। প্রত্যেকটি পুজোমণ্ডপ তাদের দলবল নিয়ে শোভাযাত্রা করে যোগ দেয় এই মিছিলে। কার শোভাযাত্রা কত বড়, কে আগে ঠাকুর নিয়ে যাবে এই নিয়ে চলে লড়াই। রীতিমতো লাঠি-সোঁটা এমন কি তরোয়াল নিয়েও এই লড়াই চলতে দেখা যায়। হালিশহরের জ্যাংড়া কার্তিক ও ধুমো কার্তিকের পূজা খুব বিখ্যাত। এভাবেই যুদ্ধযাপন এবং সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে কার্তিক ঠাকুরের আশীর্বাদ প্রার্থনা করে বাঙালি।

পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বলতে গেলে দক্ষিণ ভারতে কার্তিক পুজো বেশ জনপ্রিয়। তামিল ও মালায়ালাম ভাষায় কার্তিক মুরুগান বা ময়ূরী স্কন্দস্বামী এবং কন্নড় ও তেলেগু ভাষায় তিনি সুব্রহ্মণ্যম নামে পরিচিত। তামিল জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে দক্ষিণ ভারত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া ও মরিশাসে। তামিলরা বিশ্বাস করেন মুরুগান হল তামিলদেশের বা তামিলনাড়ুর রক্ষাকর্তা। শ্রীলংকার দক্ষিণাংশে কার্তিকের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত কথারাগাম দেবালয়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকেন। কার্তিক হলেন ভারতের সর্বাধিক পূজিত দেবতাদের মধ্যে অন্যতম।

তারকাসুরকে বধের জন্য জন্ম হয় কুমার কার্তিকের। ভগবান শিব এবং মাতা পার্বতীর নিজ নিজ তেজোদীপ্তি একত্রিত হয়ে সৃষ্টি হয় একটি জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ডের। অগ্নিদেব ওই অগ্নিপিণ্ডটিকে দেখে চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যান। ইতিমধ্যে মাতা পার্বতীর ধ্যান ভাঙলে তিনি অগ্নিদেবের কান্ড দেখে ক্রুদ্ধ হন। এদিকে অগ্নিদেব ওই অগ্নিপিণ্ডের তাপ সহ্য করতে না পেরে তাকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করেন। অগ্নিপিণ্ডটি আশ্রয় নেয় সরবনে। সেখানে জন্ম হয় এক সুন্দর শিশুর। কৃতিকাগণ প্রথম ওই শিশুকে স্তন্যপান করিয়েছিলেন বলে ওই শিশুর নাম হয় কার্তিক। পরে মাতা পার্বতী স্কন্দকে কৈলাসে নিয়ে আসেন।

ভগবান কার্তিকের স্ত্রীর নাম হলো দেবসেনা এবং বালি বা বল্লি, সুরাপদ্মকে বধ করার পর দেবরাজ ইন্দ্র নিজ কন্যা দেবসেনার সঙ্গে কুমার কার্তিকের বিবাহ দেন। পরে নবীরাজের কন্যা বালির সঙ্গেও কার্তিকের বিবাহ হয়।
দক্ষিণ ভারতে কার্তিকের অনেক মন্দির রয়েছে এর মধ্যে বিখ্যাত ছটি মন্দির হল
১) স্বামীমালাই মুরুগান মন্দির,
২) পালানী মুরুগান মন্দির,
৩) থিরুচেন্দুর মুরুগান মন্দির,
৪) থিরুপ্পারামকুমারাম মুরুগান মন্দির,
৫) থিরুথানি মুরুগান মন্দির,
৬) পাঝামুদিরচোলাই মুরুগান মন্দির।