Categories
শিক্ষা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর উদ্দেশ্যে স্যাকট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের স্টেট এডেড কলেজ টিচারদের ( SACT) মনোদর্পণ

মুখ্যমন্ত্রীকে স্যাকট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের খোলা চিঠি

মাননীয়া, মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু,

শ্চিমবঙ্গ সরকার

   মহাশয়া,

স্টেট এডেড কলেজ টিচারস’ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (SACTWA)-এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

গত ১৯শে অগাস্ট, ২০১৯ হাওড়ার প্রশাসনিক সভা থেকে আপনি আমাদের সংগঠনের (তৎকালীন  WBGLA) প্রায় এক দশকের দাবীকে মান্যতা দিয়ে রাজ্যের কলেজ গুলিতে কর্মরত চুক্তিভিত্তিক সকল শ্রেণির শিক্ষকের, যথা — পার্ট টাইম, হোল টাইম কন্ট্রাকচুয়াল, গেস্ট লেকচারার প্রভৃতির ভেদরেখা মুছে দিয়ে “স্টেট এডেড কলেজ টিচার” পদমর্যাদা দান করেন। সকলকে একছাতার তলায় এনে  এক ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক সম্প্রদায় গড়ে তোলার এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সাধুবাদ যোগ্য। যা গত ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত মেমোরেন্ডামের ( 2081- EDN (CS) /10M- 83/2019, Dated- 23.12.2019) দ্বারা ১লা জানুয়ারি, ২০২০ সাল থেকে কার্যকরী হয়।  কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে রাজ্যব্যাপী ৪৬১ টি কলেজের ১২,৯৭৫ জন স্টেট এডেড কলেজ টিচার এক সুরে যে কথা আপনার কাছে নিবেদন করতে চান, তা তাঁদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত।

প্রথমেই বলতে হয় স্টেট এডেড কলেজ টিচার বিষয়ে উক্ত মেমোরেন্ডামে বেশকিছু অসংগতির কথা। যা সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকগণও স্বীকার করেছেন। এই অসংগতি দূরীকরণের জন্য আমরা সাংগঠনিক ভাবে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী, ডিপিআই, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, মুখ্যসচিব, বিধানসভার উচ্চশিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সহ সকল সদস্য  এবং উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রায় সকল আধিকারিকের কাছে কয়েক দফায় লিখিতভাবে আবেদন জানাই। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত তার কোনো সুরাহা হয়নি।

উপরন্তু গত ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্যে  নতুন কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি (NEP-2020) চালু হয়েছে।  তিন বছরের UG Course- এর পরিবর্তে চার বছরের কোর্স। বহু কলেজে পোস্ট গ্রেজুয়েশন কোর্স ও রিসার্চ সেন্টার চালু করেছে। এর পরিণাম স্বরূপ কলেজ গুলির সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষক স্টেট এডেড কলেজ টিচারদের (SACT) ওপর পাহাড় পরিমাণ দায়িত্ব ও কাজের চাপ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রের সেই চাপের সঙ্গেই নতুন শিক্ষাপদ্ধতির উপযোগী উচ্চমানের অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার গড়তে রাজ্যানুমোদিত কলেজ শিক্ষকগণ (SACT) সর্বদাই সচেষ্ট — যা বহু ক্ষেত্রেই রীতিমতো ব্যয় সাপেক্ষ।

এমতাবস্থায় স্টেট এডেড কলেজ টিচারদের পূর্বের মেমোরেন্ডামের দ্রুত পরিমার্জন যেমন অতি আবশ্যক, তেমনি শিক্ষকদের ওপর নতুন দায়িত্বভার অর্পণের কারণে নতুন কিছু ভাবনাও অত্যন্ত অনিবার্য হয়ে পড়েছে। সঙ্গে রয়েছে আকাশচুম্বী বাজার মূল্য। তাই আজ এই খোলা চিঠিতে বর্তমান সময়, ক্রম প্রসারিত কর্মক্ষেত্রের চাপ ও তার প্রেক্ষিতে স্টেট এডেড কলেজ টিচারদের প্রাপ্তি জনিত বৈষম্যকে সামনে রেখে আমরা প্রাণ খুলে কিছু কথা আপনার নিকট তুলে ধরতে চাই।

১) SACT -এর জন্য ছুটি সংক্রান্ত যে নির্দেশিকা রয়েছে, তাতে কিছু অসংগতির কথা সরকারি আধিকারিকগণও স্বীকার করেছেন। যেমন Child Care Leave অধরা। নেই এক্সট্রা-অর্ডিনারি লিভ বা পিতৃত্বকালীন ছুটি। যা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশনামায় বর্তমানে ভারতবর্ষের সব স্টেটের সব ধরনের কর্মীরাই পেয়ে থাকেন। এই রাজ্যেও তা কার্যকর। বঞ্চিত শুধু স্টেট এডেড কলেজ টিচারগণ।

২) স্টেট এডেড কলেজ টিচার সংক্রান্ত বর্তমান মেমোরেন্ডাম অনুযায়ী স্টেট এডেড কলেজ টিচারগণ অবসরকালীন পাঁচ লক্ষ টাকা (এককালীন) পাবেন। কিন্তু কোনো শিক্ষক যদি চাকুরিরত অবস্থায় মারা যান, তবে বর্তমান নিয়মানুযায়ী  তিনি অর্থাৎ তাঁর পরিবার চাকুরিজনিত সেই সুবিধা পাবেন না। এমনকি ৫৯ বছর বয়সে মারা গেলেও নয়। এই বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। একদিকে উচ্চশিক্ষা বিভাগের সেবায় নিয়োজিত হলেও স্টেট এডেড কলেজ টিচারদের জন্য  নেই স্থায়ী সরকারী কর্মীদের মতো মহার্ঘ্য ভাতা (ডিএ) বা এইচ আর এ কিংবা পিএফ/ ইপিএফের সুবিধা, অন্যদিকে নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে তাঁদের পরিবার যদি চাকুরিরত অবস্থায় মৃত্যুজনিত ন্যূনতম সুবিধা টুকু না পায়, তবে এর চেয়ে পরিতাপের বিষয় আর নেই। এই দুই বিষয়েও আপনার সহানুভূতিশীল দৃষ্টি আকর্ষণ করছে আমাদের সংগঠন।

৩) রাজ্যের সকল শ্রেণির চুক্তিভিত্তিক কর্মীগণ পিএফ/ ইপিএফের সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু স্টেট এডেড কলেজ টিচাররা এই সুবিধা পান না — যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।

৪) স্টেট এডেড কলেজ টিচারগণ যেন তার সমগ্র কর্মজীবনে অন্তত একবার মিউচুয়াল ট্রান্সফারের সুযোগ পান, সে বিষয়ে অতিদ্রুত নির্দেশিকা প্রকাশের জন্য আবেদন জানাই।

৫) বর্তমানে আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্যের বাজারে স্যাকটরা যা সাম্মানিক ভাতা পান, তাতে তাঁদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সময়ের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের অন্যান্য রাজ্য, যেমন পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড সহ (04-1-13512016 (101401, dated- 11.05.2023) পাঞ্জাব(DPIHE-COLGOMISC/161/2021-COLLEGE EDUCATION-DPI-HIGHER EDUCATION, dated- 15.09.2022), হরিয়ানা (KW4/36-2010 CI(5), dated 27.06.2019), কেরালা (1293/2018/HEdr, dated 04.07.2018), এমনকি লাদাখের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলও(25 HE (UTL) of 2024, dated 09.08.2024) কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল এড হক/চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষকদের মাসিক সাম্মানিক ভাতা ন্যূনতম ৫৭,৭০০/- টাকা করেছে। সেখানে আমরা, স্টেট এডেড কলেজ টিচাররা মাসিক সাম্মানিক ভাতা পাই অর্ধেকেরও কম।

আমরা অনেকটাই প্রত্যাশা করেছিলাম ২০২৫ সালের বাজেট অধিবেশনে আমাদের এই হতাশাময় দিনগুলির অবসান ঘটবে। কিন্তু আমরা পুনরায় হতাশ হলাম। এই বাজেটে সরকারি কর্মচারী দের জন্য ৪% মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু বর্তমানে কলেজ-শিক্ষা সহ অধিকাংশ দপ্তরে সরকারি কর্মীর তুলনায় চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীর সংখ্যা সমধিক। যেমন কলেজ-শিক্ষায় অধ্যাপক/সহকারী অধ্যাপকের তুলনায় স্টেট এডেড কলেজ টিচার বেশি। আমাদের মতো চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরাও সরকারি কর্মচারীর মতো একই বাজারে ব্যাগ হাতে বাজার করতে যেতে হয়। একই রকমের সামগ্রী আমাদেরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই সাম্মানিকে  আমাদের কি দুরবস্থা হয়, একবার ভেবে দেখবেন।

যাই হোক, প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয়, সম্মানীয় উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী মহাশয় বেশ কয়েকবার আমাদের সমস্যা গুলি সমাধানের ও নতুন কিছু ভাবনার আশ্বাস প্রদান করেছেন। তাঁর আশ্বাস প্রদানকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে ১২৯৭৫ জনের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরকে কেবল আশ্বাস প্রদানে আর রোধ করা যাচ্ছে না। বলতে গেলে ২০১৯ সালের আগেও আমাদের জন্য কেউ কিছু ভাবেনি। একমাত্র আপনি আমাদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখেছিলেন বলেই আমরা রাজ্য ব্যাপী এতগুলো পরিবার নতুন জীবন পেয়েছিলাম। এমতাবস্থায় আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, কেবল  আপনি ছাড়া আগেও আমাদের কথা কেউ ভাবেনি, আর এখনো ভাবছে না। তাই একমাত্র আপনিই পারেন এই স্থবিরতা থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের অপূর্ণ দাবি সমূহকে পূর্ণতা দিতে। আশা করি নতুন অর্থবর্ষের শুরুতে আপনার হাত ধরেই আমাদের দীর্ঘ হতাশাময় দিনগুলির পরিসমাপ্তি ঘটবেl

ধন্যবাদান্তে

  শ্রী গোপাল চন্দ্র ঘোষ,                                              রাজ্য সাধারণ সম্পাদক,                                       স্টেট এডেড কলেজ টিচারস’                                   ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

বিঃদ্রঃ: এই বিষয়ে লেখা সম্পূর্ণরূপে সংগঠনের ব্যক্তিগত, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ কোন ভাবে দায়ী নয় l