
পড়ে থাকা প্রাকৃতিক গাছের মূল, কাণ্ড, তালশাসের কটুম কাটুম দিয়ে স্বনির্ভর হচ্ছে খোয়াব গাঁয়ের লোধা পরিবার
যুগের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে লোধা পরিবার
নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝাড়গ্রাম :
পড়ে থাকা প্রাকৃতিক গাছের মূল, কাণ্ড, তালশাসের কটুম কাটুম দিয়ে স্বনির্ভর হচ্ছে খোয়াব গাঁয়ের লোধা পরিবার। নামই হচ্ছে খোয়াব গাঁ অর্থাৎ স্বপ্নের গ্রাম আর সেই স্বপ্নের গ্রামে রীতিমতো লোধা পরিবাররা অন্যান্য জাতিদের মতো সমাজে টিকে থাকতে তারা প্রাকৃতিক সম্পদকেই বেছে নিয়েছে। আর তাদের আর তাদের হস্তশিল্পের নিপুন কার্যকরিতায় নজর কাড়ছে এই শৈল্পিক। যদিও প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় এই লোধা শবর ১৩ টি পরিবার তারা মূলত শহর থেকে সম্পূর্ণ আলাদাই অবস্থান করে। নিজেদের জীবন জীবিকা আচার-আচরণ সামাজিক রীতিনীতি বিবাহ সমাজের শহরের মানুষ তাদেরকে আলাদা করে রেখেছে।
তাই তাদের প্রধান জীবিকারই ছিল চাষবাস এবং লেবার খাটা। কিন্তু ২০১৮’র পর থেকে তাদের জীবনে নিয়ে এলো পরিবর্তন চালচিত্র একাডেমি। বছর তিন চারেক ধরে তাদের রীতিমতো ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে তুলেছে তারা এবং তাদেরকে আজ নিজেদের তৈরি সংগ্রহশালা তৈরি করেছে যেখানে প্রতিদিনই এই লোধা সবার পরিবারের লোকজন কাজ থেকে ফিরে এসে প্রাকৃতিক জিনিসের উপর দিয়ে তৈরি করে হস্তশিল্প। যেমন পড়ে থাকা নষ্ট হয়ে যাওয়া গাছের কান্ড, মূল, ডাল দিয়ে তারা যেমন কাঠের জিনিসপত্র তৈরি করছে সেই সঙ্গে নষ্ট হওয়া ফেলে দেওয়া নারকেল, ডাব, তালের আটি কে ঘষে মেজে দক্ষতার নৈপুূর্ণতা দিয়েই তৈরি করে ফেলেছেন সুনিপুণ হস্তশিল্প।
আর তার নজর কাড়ছে তাদের এই শৈল্পিক নামক সংগ্রহশালায়। শুধু শহরের মানুষ না, জেলা এবং রাজ্যের সহ বিদেশের বহু মানুষ ঘুরতে এলে কিনে নিয়ে যাচ্ছে সেইসব হস্তশিল্প এবং সেই নিদর্শন যা তাদের আর্থিক স্বনির্ভরতার সঙ্গে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটাচ্ছে। একে একে কাঠের হাতি, ঘোড়া মাছ, ব্যাঙ, ময়ূর সহ একাধিক ক্ষেত্রেই নিজস্বতা বজায় রাখছে এই শিল্পীরা। আগামী দিনে হয়তো বিভিন্ন বড় বড় ইভেন্টে এবং শহর সৌন্দর্যায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে এই লোধা কর্মী পরিবারদের। বড়দের সঙ্গে দক্ষ হচ্ছে ছোটরা।পড়াশোনার সঙ্গে এই সময় মত বসে পড়ছেন বড়দের সঙ্গে এই হস্তশিল্পের কাজে। আর তৈরি করে ফেলছে তাদের কটুম-কাটুম। গত ২০২১ সালে সরকার থেকে করে দেওয়া হয় তাদের জন্য এই সংগ্রহশালা। যাতে নিজেদের তৈরি করা হস্তশিল্প পর্যটকদের আকর্ষণ করছে।
ষষ্ঠী চরণ আহির কিশোর ভূপতি মল্লিকরা বলেন চাষবাস ও কাজের ফাঁকেই এই হস্তশিল্পের কুটুম কাটুমের কাজ করা। পরিবার ও সংসার চালাতেই এই কাজ করা সঙ্গে নিজেদের স্বনির্ভর হওয়া। পর্যটকদের ব্যাপক ঝোঁক রয়েছে আমাদের এই কুটুম কাটুমের উপর। তবে এলাকার রাস্তা প্রধান সমস্যা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের এই স্বনির্ভর হওয়ার পথে।
চালচিত্র একাডেমির ও এই খোয়াব গায়ের পরিকল্পনায় মৃণাল কুমার মণ্ডল বলেন “শহরের মানুষের সঙ্গে আধুনিক হতে এবং নিজেদের স্বনির্ভর করতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। তাই আমরা বেছে নিয়েছি এই লোধা পরিবারদের। অবনীন্দ্রনাথের কবিতা কুটুম কাটুমের নাম থেকে তাদের হস্তশিল্পের নাম দিয়েছে কুটুম কাটুম। ওরা স্বনির্ভর হোক,আধুনিক হোক মানুষের সঙ্গে মিশে যাক এটাই আমাদের উদ্দেশ্য”।
যেকোনো ধরনের খবর ও বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : 8918270591