আইসিইউতে থাকলে রোগীর হাসপাতালের বিল এত বেড়ে যায় কেন? কি এমন বিশেষ পরিষেবা রোগী পায়!
আইসিইউতে কি কি খরচ সাপেক্ষ পরিষেবা রোগীকে দেওয়া হয়?
বেঙ্গল সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :-
বিগত বেশ অনেকদিন ধরে আইসিইউ-এর বেডে লড়াই করে চলেছেন টলিউড অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। তাঁর আরোগ্য কামনা করছে গোটা টলিউড। সমাজমাধ্যমে ঐন্দ্রিলার অনুরাগীদের প্রার্থনার ঢল নেমেছে। সবার একই মনস্কামনা, “ফাইটার ঐন্দ্রিলা তাড়াতাড়ি মারণ রোগকে পরাজিত করে আবার জীবনে ফিরে এসো”। এরই মধ্যে অভিনেতা অনিন্দ্যপূলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাজমাধ্যমে করা একটি পোস্ট সামনে নিয়ে এলো অনেক প্রশ্ন। সম্প্রতি অভিনেতা অনিন্দ্যপূলক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন, “ফাইটার ঐন্দ্রিলাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনার চেয়ে অর্থের সাহায্য জরুরী কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার”।
বর্তমানে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বছর ২৪-এর এই টলিউড অভিনেত্রী। ‘অ্যান্টিবায়োটিক ট্র্যাকিওস্টোমি কেয়ার’ -এর মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসা চলছে। আইসিইউতে এয়ার ম্যাট্রেস সহ সমস্ত পরিষেবাই তাঁর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। যেকোনো বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রোগীর চিকিৎসা চলা মানে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচা। তাছাড়া আইসিইউ-এর কি কি পরিষেবা ওই রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজন হচ্ছে সেটার উপর নির্ভর করে খরচা আরো বাড়ে। এই হিসেবে দেখতে গেলে এই মুহূর্তে অভিনেত্রীর চিকিৎসায় প্রতিদিন অসম্ভব পরিমাণে খরচা হচ্ছে।
কোনো রোগীকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করা হলে স্বাভাবিকভাবেই তার বিল অনেক বেশি হয়। সেই নিয়ে ক্ষোভ জমা হয় রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে। কিন্তু এমন কি পরিষেবা দেওয়া হয় আইসিইউতে সেটাও তো আমাদের জানা দরকার তাই না?
এই ব্যাপারে চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসু আমাদের জানান, “ক্রিটিকাল কেয়ারে রোগীর তৎক্ষণাৎ পরিস্থিতি কেমন তা জানার জন্য প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। সেন্ট্রাল লাইন, গ্যাজেটার, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, সাপোর্ট সিস্টেম ইত্যাদি রোগীকে দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ঐন্দ্রিলার মতো রোগী যার কিনা ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে, আগে ইতিমধ্যেই দুবার ক্যান্সার হয়েছে, তাঁর আইসিইউ-এর খরচা প্রতিদিন ৫০ হাজারের থেকে খানিক বেশি হবে তবু কম নয়”। এর ওপর আবার আইসিইউতে থাকা রোগীকে দেখাশোনা করার জন্য একটি বড় দলকে সর্বক্ষণের জন্য নিযুক্ত করা থাকে হাসপাতালে তরফে। তারও একটা বিশাল খরচ রয়েছে।
আইসিইউতে থাকা রোগীর হাসপাতালের বিলের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে রোগীর ডায়েটের খরচ। কারণ যে কোনো রোগের সঙ্গে লড়াই করতে আমাদের প্রয়োজন হয় প্রোটিনের। তাই ইন্টেন্সিভ কেয়ারে থাকা রোগীদের ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে হাই প্রোটিন প্রেসক্রাইব করা থাকে। এদিকে আমাদের সাধারণ রান্নাঘরে রান্না হওয়া প্রোটিন খাদ্য রোগীকে দেওয়া যায় না। তাই রোগীর জন্য ফর্মুলেটেড প্রোটিন খাদ্য দেওয়া হয়। এই ফর্মুলেটেড প্রোটিন খাদ্যের দাম অনেক বেশি।
আইসিইউতে যে সমস্ত চিকিৎসক, নার্স, সহকারি কর্মী ও টেকনিশিয়ানরা কাজ করেন তাঁদের কাজের গতি, তাৎক্ষণিকতা, রোগ নির্ণয় এই সব কিছুর উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খরচা অনেকাংশে বেড়ে যায়। ক্রিটিকাল কেয়ারে থাকা বেশিরভাগ রোগীরই দেখা যায় কোনো না কোনো একটা অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করছে না। যেমন হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে ভেন্টিলেটরের দ্বারা সেই অঙ্গটিকে কাজ করানো হয়। এর জন্যেও খরচা অনেকটা বেড়ে যায়।
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে বেসরকারি হাসপাতালগুলি আইসিইউ-এর বিল যেন মাত্রাতিরিক্ত হারে না বাড়ায় তার জন্য নির্দেশিকা জারি করা আছে। প্রয়োজনে সরকারের তরফে বিশেষ ছাড়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।
যেকোনো ধরনের খবর ও বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : 8918270591